বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন

হজে খরচ বৃদ্ধির তিন কারণ

হজে খরচ বৃদ্ধির তিন কারণ

স্বদেশ ডেস্ক:

কিছু খাতে ব্যয় কমলেও মোটের ওপর এবার হজের খরচ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেশি খরচ গুনতে হবে হজযাত্রীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত তিন কারণে এবার খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো বেশি লাগছে বিমান ভাড়া বৃদ্ধি ও টাকার দরপতনের কারণে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ ১০ হাজার টাকা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এবার কয়েকটি সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন হজ হবে। সৌদি সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। চলতি মৌসুমে সরকারি প্যাকেজে খরচ পড়বে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। আগের বছর প্যাকেজ ছিল দুটি। এর মধ্যে প্যাকেজ ১-এর খরচ ছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা। আর প্যাকেজ ২-এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্যাকেজ থাকছে একটিই। গতবারের প্যাকেজ ১-এর তুলনায় এবার বেশি পড়বে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। প্যাকেজ ২-এর তুলনায় খরচ বেশি হবে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা।

জানা গেছে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজে যেতে মাথাপিছু খরচ পড়বে সর্বনিম্ন ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। কোরবানির খরচ, বাস সার্ভিসসহ কয়েকটি সেবা হাবের এই প্যাকেজের মধ্যে ধরা হয়নি। কোরবানি বাবদ অর্থ প্রত্যেক হজযাত্রীকে আলাদাভাবে সঙ্গে নিতে হবে। গত বছর বেসরকারিভাবে হজের খরচ পড়ে ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। সেই হিসাবে এ বছর খরচ বাড়ছে দেড় লাখ টাকারও বেশি। কোরবানির টাকা মিলিয়ে বাড়তি খরচ দুই লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সরকারিভাবে ঘোষিত এবারের হজ প্যাকেজে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার ছয়টি খাতে ব্যয় কমেছে প্রায় ২১ হাজার টাকা। এর মধ্যে মক্কা ও মদিনার বাড়ি ভাড়া কমেছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ হাজার ৬০ টাকা, বাস ভাড়া কমেছে ৭ হাজার ৪৭৩ টাকা, বীমার ফি কমেছে ১ হাজার ৭২৬ টাকা, মিনা-মক্কা বাস ভাড়া কমেছে ১ হাজার ৪৯ টাকা, আইডি কার্ডের খরচ কমেছে ২০০ টাকা। এ ছাড়া এ বছর জেদ্দা বিমানবন্দরে আপ্যায়ন খরচ ৪৮৬ টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার হজের খরচ বেড়েছে মূলত তিনটি কারণে বিমান ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি মুদ্রার বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়া এবং মুয়াল্লিম ফি (মিনা/আরাফাত ময়দানে সেবা) বৃদ্ধি।

গত বছর বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তা প্রায় ৫৮ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। গত বছর মুয়াল্লিম ফি ছিল ৬১ হাজার ২৩৬ টাকা; এ বছর তা ৯৯ হাজার ৩৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৬ টাকা।

রিয়ালের বিপরীতে টাকার দরপতনও বড় কারণ। গত বছর এক সৌদি রিয়ালের দাম টাকায় পড়েছে ২৪ টাকা ৩০ পায়সা। এ বছর হয়েছে ২৮ টাকা ২৯ পয়সা। এ কারণে অতিরিক্ত ৬২ হাজার ৪৮৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। এ ছাড়া জমজমের পানি, লাগেজ পরিবহন ফি, ভিসা ফি, খাওয়া এবং হজ গাইড খাতে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ১৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কামাল আহমেদ নামে এক হজযাত্রী বলেন, ‘কয়েক বছর আগে হজে যাওয়ার জন্য টাকা রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু বছর বছর হজের খরচ বাড়ছে। এবার এক লাফে প্রায় দেড় লাখের মতো বেড়ে গেছে। এখন জমানো টাকার সঙ্গে আরও অর্থ যোগ করতে হবে। এটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। আশা করি সরকার নতুন করে বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।’

এ বছর হজের খরচ বাড়ানোর বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে এবার বিমান ভাড়া আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সৌদি আরবে সার্ভিস ব্যয় রিয়ালে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। এ কারণেও আগের তুলনায় খরচ বেড়ে গেছে।

এ জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হাজিদের সেবা দেওয়ার জন্য এবার ভালো মানের তাঁবু ঠিক করেছি। সৌদি আরবে মিনা এলাকায় চার ক্যাটাগরির তাঁবু আছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরি তাঁবুর খরচ প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে খরচ পড়বে ২ লাখ ২৪ হাজার। ‘সি’ ক্যাটাগরির খরচ ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা। ‘ডি’ ক্যাটাগরির আরেকটু কম ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ‘সি’ ক্যাটাগরির তাঁবু ঠিক করেছে।’

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘এবার হজের খরচ বাড়ার মূল কারণ বিমান ভাড়া বৃদ্ধি। বিমান কর্তৃপক্ষ ভাড়া কমালে খরচ কমে যেত। তাও আমরা বেসরকারিভাবে বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে কিছু টাকা কম নিচ্ছি। আশা করি, এর মধ্যেই তাদের ভালো সেবা দিতে পারব।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877